আধুনিক ক্রিকেটে কতটা পিছিয়ে বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শুরুটা বেশ জাগানিয়া ছিল। বিশেষ করে পারভেজ হোসেন ইমনের ইতিবাচক ব্যাটিং জানান দিচ্ছিল বড় রানের। ওপেনিং জুটিতে তুলেছিল ৪৬ রান। কিন্তু পাওয়ার-প্লে শেষেই বেড়িয়ে আসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আসল রূপ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করতে গিয়ে মন্থর ব্যাটিংয়ে খেলার গতি পাল্টে দেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ আর মেহেদী হাসান মিরাজ। এতে কোনোমতে দেড়শ ছাড়ানো লড়াইয়ের পূঁজি পায় বাংলাদেশ। এরপর তাসকিন-সাকিবদের খাপছাড়া বোলিংয়ে সেটাকে অনায়াসে পার করে শ্রীলঙ্কা। ৭ উকেটের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
শৈশব, কৈশর পেরিয়ে যৌবনে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। প্রায় এক যুগের বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ এখনও আধুনিক ক্রিকেট রপ্ত করতে পারেনি। এই ম্যাচে লঙ্কান ব্যাটাররা দেখিয়ে দিয়েছে আধুনিক টি-টোয়েন্টি থেকে কতটা দূরে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও সেটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইমন আর শামীম পাটোয়ারী ছাড়া কেউই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করতে পারেনি। এ ম্যাচে সাতজন ব্যাটার ব্যাট করতে নেমেছিলেন। এরমধ্যে পাঁচজনই ব্যাট করেছেন ১০০ বা এর আশেপাশে স্ট্রাইকরেটে৷ তিনজনের স্ট্রাইকরেট তো ছিল একশ’রও কম।
অধিনায়ক লিটন দাস ৫৪.৫৪ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ১১ বলে ৬ রান। ৯৪.১১ স্ট্রাইকরেটে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম করেছিলেন ১৭ বলে ১৬ রান। ৭৬.৯২ স্ট্রাইকরেটে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩ বলে ১০ রান।
দলের হালধরা দুই ব্যাটার মিরাজ আর নাঈমের স্ট্রাইকরেট ছিল একশো’র কিছুটা বেশি। ১২৬.০৮ স্ট্রাইকরেটে মিরাজ করেছিলেন ২৩ বলে ২৯ রান। আর প্রায় দুই বছর পরে দলে ফেরা নাঈম শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ১১০.৩৪ স্ট্রাইরেটে ২৯ বলে করেছিলেন ৩২ রান।
কোথায় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ
শুরু থেকেই পুরনো কৌশলেই খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে একপ্রান্তে ইমন হাতখুলে খেললে অন্যপাশে দেখেশুনে খেলেন তামিম। ফলে পাওয়ার-প্লের সঠিক ব্যবহারটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। একজন ভালো স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করলে অন্যজনকে ধরে খেলতে হবে; এই কৌশল শুরুতেই পিছিয়ে দিয়েছিল টাইগারদের। মন্থর ব্যাটিং করা তামিম ফেরেন ১৭ বলে ১৬ রান।
এরপর উইকেটে এসে থিতু হওয়ার তত্ত্বে দলকে ডুবিয়েছেন লিটন-হৃদয়রা। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই হাঁসফাঁস করা লিটন দাস রানের চাকা সচল রাখতে পারেননি। অতিরিক্ত ডটবল খেলে শেষ পর্যন্ত ১১ বলে ৬ রান করে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন। হৃদয়ের অবস্থাও ছিল একই। ১৩ বল উইকেটে থেকে একটি বাউন্ডারিও মারতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৩ বলে ১০ রান করে আউট হন তিনি।
এরপর ব্যাটিংয়ে এসে দলের হালধরার চিন্তায় কফিনে শেষ পেরেকটা মারেন নাঈম আর মিরাজ। কাউন্টার অ্যাটাক না করে বরং ডিফেন্সেই মনযোগ দেন তারা। শেষদিকে বাউন্ডারি হাঁকানোর মতো ক্রিকেটার থাকলেও ধীরগতির ব্যাটিং করে যান এই দুজন। ফলে ১৮০-২০০ রানের ইনিংস থামে মোটে ১৫৪ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসের চিত্র
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ঠিক বাংলাদেশের বিপরীত ব্যাটিংটা করেছে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন তারা। দু’জনই হাত খুলে খেলতে থাকেন। পাল্লেকেলেতে রীতিমতো চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফোটান। পাওয়ার-প্লেতে দুইশর উপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেন পাথুম নিশাঙ্কা আর কুশাল মেন্ডিস। এখানেই ম্যাচের পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। এবং ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।
আধুনিক ক্রিকেটের চেয়ে কতটা পিছিয়ে বাংলাদেশ
ইমন-শামীম বাদে বাকি পাঁচজন যে স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ ইনিংসে তারচেয়েও বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে ইংল্যান্ড। যেটার নাম দিয়েছে তারা বাঁজবল। আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য ঠিক এতটুকুই। অন্য দেশ টেস্ট ক্রিকেটে যেই স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেই স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে।
কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে
প্রথমত, সবার আগে মানুষিক পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে। খেলার পরিবেশ, উইকেট এবং ফরম্যাট বিবেচনা করে ব্যাটিং করতে হবে। দুইটা উইকেট চলে গেছে জন্য খোলসের ভেতর ঢুকে যাওয়ার চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। খারাপ বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে হবে, ভালো বলকে সমীহ করতে হবে। রানের চাকা সচল রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, পাওয়ার হিটিংয়ে মনযোগ দিতে হবে ব্যাটারদের। ব্যাটিংয়ের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান করতে হবে। বারবার একই শট খেলে আউট হচ্ছেন ব্যাটাররা। প্রায় প্রতিটি ম্যাচে একইভাবে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলছেন। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।