যেসব কারণে ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প
একসময় বেশ আলোচনায় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্ব। বেশ প্রশংসিতও ছিল ‘ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্ব’। ভারতের যেকোনো বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত যুক্তরাষ্ট্র। ভারতকে বলা হতো, এশিয়ায় আমেরিকার চোখ। কিন্তু সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে এবার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘ভারতের অর্থনীতি ধসে পড়লেও আমার কিছু যায় আসে না।’
ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যেনো দুরত্ব তৈরি হয়েছে দুই দেশের বন্ধুত্বের মাঝে। একসময় এশিয়ায় আমেরিকার প্রধান মিত্র হিসেবে বিবেচিত ভারত এখন ট্রাম্পের সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কেনো এমন দুরত্ব তৈরি হলো দুই দেশের বন্ধুত্বের মাঝে?
মূলত রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, বাণিজ্যবিষয়ক অচলাবস্থা এটার মুল কারণ। সেটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত। দুই দেশের সামরিক উত্তেজনার সময় ভারতের ভূমিকার কারণেই ট্রাম্পের এই অবস্থান বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যার প্রভাব পড়েছে ট্রাম্পের আলোচিত শুল্ক নীতির উপর। দেশটির ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করলে এই শুল্কের পরিমাণ বাড়তে পার বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এই সম্পর্ক কিভাবে খারাপ হলো সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। যেখানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি বিষয়।
কীভাবে এই সম্পর্ক খারাপ হলো?
মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত
কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত-পাকিস্তান। দুই দেশের সামরিক উত্তেজনার মাঝে পাকিস্তানে ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে ভারত। এ ঘটনায় পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ছিলেন সামরিক বিশ্লেষকরা। পরে অবশ্য ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি যায় দুই দেশ। এ ঘটনার পরে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায় পাকিস্তান। বিপরীতে চুপ থাকে ভারত। এই ‘অবজ্ঞা’ ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে ধীরে ধীরে ট্রাম্পের শত্রুভাবাপন্ন রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে ভারত। রাশিয়ার সঙ্গে বড় রকমের জ্বালানি বানিজ্য করছে ভারত। এর সঙ্গে আছে সামরিক বানিজ্যও। ভারতের সস্তা রাশিয়ান তেল ও অস্ত্র কেনাকে ট্রাম্প বলেছেন, ‘পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা।’ এতে মার্কিন স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
বাণিজ্য অচলাবস্থা
ভারতীয় কৃষি পণ্য বাজারে প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় মার্কিন-ভারত বাণিজ্য আলোচনা থমকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া, ভারত তাদের কৃষিপণ্যের বাজার আরও উন্মুক্ত করে দিক। ‘নো মনিটরিং’ সিস্টেমে ভারতে কৃষি পণ্য রপ্তানি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারত বলছে, তাদের ছোট ছোট কৃষকদের জীবন-জীবিকা, খাদ্যনিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির স্বার্থেই এই খাত রক্ষা করতে হবে।
ভারতে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় বিষয় হলো ভারতের অশুল্ক বাধা, যেমন ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার’, বা মান নিয়ন্ত্রণ। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এসব নিয়ম আমদানির পথে বাড়তি ঝামেলা। ভারত সরকার বলছে, এসব নিয়ন্ত্রণ নিম্নমানের পণ্য ঠেকাতে এবং দেশীয় উৎপাদকদের উৎসাহ দিতে করা হয়েছে।
ভারতের এই নীতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় পণ্যে ২৫% শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। কয়েক দফা আলোচনার পরও এটি কমিয়ে আনতে পারেনি ভারত।
ভূরাজনৈতিক ফলাফল
সম্প্রতি ট্রাম্পের পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা অন্য যেকোনো সময়ের বেড়েছে। ক’দিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা আর ভারতের ওপর চাপ, ভারতকে আবারও রাশিয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিল্লি পশ্চিমের দিকে ঝুঁকছিল।
ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের সম্পর্ক নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা চাইলে তাদের মৃত অর্থনীতিগুলো একসঙ্গে নিয়ে ডুবে যেতে পারে।’