বিসিবি সভাপতির বসবাস নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন ইমরুল কায়েস
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ডেভেলপমেন্ট বিভাগে চাকরি করতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যেখানে আইসিসি থেকে মোটা অঙ্কের বেতন পেতেন তিনি। দেশের ক্রিকেটকে ভালোবেসে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক।
ক্রিকেটে বিশ্বে অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। ক’দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সেই বোর্ডের সভাপতি থাকেন ১২ হাজার টাকার ভাড়া বাসায়। করছেন অতি সাধারণ জীবন-যাপন। বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেনি জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
ইমরুল কায়েস লিখেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় হয়তো আপনারা অনেকেই দেখেছেন—যে বিসিবি সভাপতি বর্তমানে মাত্র ১২ হাজার টাকার ভাড়ার একটি বাসায় থাকছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হয়নি।
আইসিসিতে চাকরির সুবাদে অনেক আগে থেকেই পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়া থাকতেন বুলবুল। বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে আপাতত বাংলোদেশেই থাকতে হচ্ছে তাকে। নিজের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে এসে বুলবুলের এই ১২ হাজার টাকার বাসায় থাকা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ইমরুল লিখেছেন, ‘একজন মানুষ, যিনি নিজের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, তাঁকে যদি এমন একটি বাসায় থাকতে হয়—তাহলে সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’
জাতীয় দলের সাবেক এই ওপেনারের দাবি, শুরুতে বিসিবি সভাপতির থাকার জন্য ভালো মানের একটি ব্যবস্থা করা হলেও, কিছু দুষ্টচক্রের লেখালেখির কারনে নিজের আত্মসম্মানে আঘাত অনুভব করেন বুলবুল। যে কারনে এমন সাধারণ জীবন-যাপন করছেন তিনি।
ইমরুল লিখেছেন, ‘আমার জানা মতে, বিসিবি শুরুতে তাঁকে ভালো মানের একটি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং কিছু দুষ্টচক্র সেই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি শুরু করে। যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করে। আর সেই সম্মানের খাতিরেই তিনি আজ এত সাধারণভাবে থাকছেন।’
বিসিবির অধীনে থাকা প্রতিটি কোচের বেতনই লাখ লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ৩১ লাখ টাকা বেতন প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের। টাইগারদের পাকিস্তানি স্পিনবোলিং পরামর্শক মুস্তাক আহমেদ প্রতিদিন পান প্রায় ৮৬ হাজার টাকা। কোচিং প্যানেলে থাকা একমাত্র দেশি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বেতনও নয় লাখ টাকা। বিদেশি কোচের প্যানেলের জন্য এত টাকা খরচ করা বিসিবির সভাপতির জন্য মাত্র ১২ হাজার টাকার বাসা মেনে নিতে পারছেন না ইমরুল।
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা দেখে থাকি বিসিবি কত টাকা খরচ করে বিদেশি স্টাফ এবং কোচদের পেছনে। যার হিসাব কোটি টাকায় গড়ায়। অথচ অন্যদিকে, একজন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড সভাপতিকে মাত্র ১২ হাজার টাকার একটি হোটেলে রাখা হচ্ছে। আমরা না হয় ব্যক্তি বুলবুলকে মূল্যায়ন না-ই করলাম, কিন্তু তাঁর মেধাকে তো অন্তত মূল্যায়ন করা উচিত, তাই না? নাকি আগের মতো যেভাবে সব কিছু চলেছে, সেভাবেই চলবে?’
আফসোস করে ইমরুল ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘আসলে আমরা কবে শিখব একজন ভালো মানুষ কিংবা ভালো কিছুর সঠিক মূল্যায়ন করতে? কবে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের উন্নয়নে যারা কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়াব?’
বাঁহাতি এই ওপেনারের আফসোস বাংলাদেশ সঠিক মানুষকে সম্মান দিতে পারে না। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এমন কিছু সংখ্যালঘু মানুষ সব সময়ই থাকে—যারা শুধু দেশের ক্রিকেট নয় বরং গোটা দেশেরই ক্ষতি করে। যেমনি করে বুলবুল ভাই নিজেই বলেছেন, কিছুদিন পর তিনি চলে যাবেন। দুঃখের বিষয়, আমরা অনেক সময় সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না।’