ইরানের প্রধান সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের উপর আকস্মিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের প্রথম সারির বেশ কিছু সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপরই দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অনিবার্য হয়ে ওঠে সামরিক সংঘাত। ১২ দিন স্থায়ী এই সংঘাতে উভয় দেশই এক অপরের উপর সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। ইসরায়েল বিমান অভিযান চালালেও ইরান ব্যবহার করে মিসাইল ব্যবস্থা। যা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে আইরনডোমকে বলা হতো অত্যন্ত কার্যকর। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, এটি বাইরের যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম। তবে একের পর এক ইরানের মিসাইলগুলো আয়রনডোমকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করে ইসরায়েলের আকাশ সীমায়। ইরানের মিসাইলগুলো বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। যেটা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
সদরদপ্তর থেকে বিভিন্ন গবেষণাগার; কোনো কিছুই বাদ যায়নি ইরানের অভিযান থেকে। যদিও ইসরায়েল সরাসরি এসব তথ্য নিশ্চিত করেনি, তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ১২ দিনে ইসরায়েলের অন্তত ৫টি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল ইরানের মিসাইল। এছাড়াও অন্যান্য স্থাপনা তো ছিলই।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ভিন্নধর্মী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। ইরানের নির্ভুল মিসাইল সক্ষমতার কারণে বিশেষ এই কৌশল নেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসরায়েল তাদের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) নেতৃত্বকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেয়। কারণ ছিল—যদি প্রধান সেনা কর্মকর্তা (চিফ অব স্টাফ) বা অন্য সিনিয়র অফিসাররা কোনো হামলায় আক্রান্ত হন, তাহলে পুরো সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব যেনো অচল হয়ে না পড়ে।
ইসরায়েলের প্রথম ভাগের সেনাকর্মকর্তারা সরাসরি অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তবে, দ্বিতীয় দলটিকে রাখা হয়েছিল একটি গোপন ও নিরাপদ জায়গায়। নিরাপদ স্থানে থাকা ওই কর্মকর্তারা যোগাযোগ করতেন না মূল সেনাবাহিনীর সাথে। যেনো প্রতিপক্ষ তাদের খুঁজে না পায়।
এই দ্বিতীয় দলের নাম রাখা হয় “বিকল্প জেনারেল স্টাফ”। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল ইয়াদাই। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওই দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সামরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ইসরায়েল। লম্বা সময় ধরে সামরিক দ্বন্দ্বে জড়িত থাকা দেশটি এর আগে কখনোই সামরিক কর্মকর্তাদের এভাবে বিভাজন করেনি। এবারই প্রথম, শত্রুপক্ষের উন্নত প্রযুক্তির নিখুঁত অভিযানের আশঙ্কায় সেনা নেতৃত্বকে এভাবে সংগঠিত করে তেল আবিব।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইরান এই ১২ দিনে পাঁচ শতাধিক মিসাইল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল ব্যালিস্টিক মিসাইল। যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলাকালীনও দুই ধাপে মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরান। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিনও ইসরায়েলের অন্তত ১০টি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ইরানের মিসাইল।
নেতানিয়াহু সরকারের কঠোর নিরাপত্তা নির্দেশনার কারণে যুদ্ধকালীন সময়ের ক্ষয়ক্ষতির ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি বিদেশি সাংবাদিকদেরও তথ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। তবুও, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, এই সময়ে কিছু আবাসিক ভবন এবং সামরিক স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুরক্ষিত বাংকার ব্যবস্থা এবং সতর্কতামূলক সিস্টেম থাকায় প্রাণহানির হার কম থাকলেও, ক্ষতির পরিমাণ ছিল উল্লেখযোগ্য। একটি তথ্যমতে, সামরিক স্থাপনা ছাড়া আরও ৩৬টি স্থানে আঘাত হানে ইরানের মিসাইল।